বিটকয়েন ওয়ালেট এবং তার প্রকারভেদবিটকয়েন ওয়ালেটের কথা বললে আমাদের সামনে ভেসে আসে কয়েনবেজ কিংবা ব্লকচেইন ডট কম এর কথা। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে ওইগুলো বিটকয়েন এর মূল ওয়ালেট না। ওইগুলোকে ওয়েব ওয়ালেট বলা যায় যা খুবই রিস্কি। এই ব্যাপারে আমি একটি কমন উক্তি নীচে তুলে ধরলাম।
"আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার বিটকয়েনের মালিক না, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই ওয়ালেটের প্রাইভেট কি শুধুমাত্র আপনি নিজে সংরক্ষণ করতেছেন না। "
এর মানে হলো, আপনি যদি আপনার ওয়ালেটের প্রাইভেট কি অন্য কারো সাথে শেয়ার করেন তাহলে আপনি টেকনিক্যালি ওই ওয়ালেটের মালিক না। সেই হিসেবে কয়েনবেজ কিংবা ব্লকচেইন কিংবা যে কোনো ওয়েব ওয়ালেট রিস্কি। তাই আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো বিটকয়েন ওয়ালেট এবং কোন ওয়ালেট ব্যবহারে আপনি সুরক্ষিত থাকতে পারেন।
প্রথমত বিটকয়েন ওয়ালেট দুই ধরণের হয়।
১. কোল্ড ওয়ালেট
২. হট ওয়ালেট
১. কোল্ড ওয়ালেট কোল্ড ওয়ালেট বলতে সেসব ওয়ালেটকে বোঝায় যেগুলো দিয়ে আপনি অফলাইনে ওই ওয়ালেট ক্রিয়েট এবং স্টোর করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পেপার ওয়ালেট। আপনি নেট কানেকশান ছাড়া এই ওয়ালেট ক্রিয়েট করতে পারবেন এবং সেটাতে বিটকয়েন জমাতে পারবেন। এইটা মূলত শুধু ওয়ালেট এর প্রাইভেট কি হোল্ড করাকে বোঝায়। কোল্ড ওয়ালেট মূলত যারা লং টাইম বিটকয়েন হোল্ড করতে চান তারা ব্যবহার করতে পারেন। যেহেতু এটার ক্রিয়েট করা হয় অফলাইনে, এইটার সিকিউরিটি অনেক বেশি। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বড় এমাউন্ট পাঠানোর আগে ছোট একটা এমাউন্ট পাঠিয়ে চেক করতে হবে যাতে বড় কোনো লসের সম্মুখীন না হন। অবশ্যই পেপার ওয়ালেট এর ক্ষেত্রে আপনার প্রাইভেট কি যত্ন সহকারে রাখুন। সেটা হতে পারে প্রিন্ট করে কিংবা ডাউনলোড করে। তবে অবশ্যই অফলাইনে রাখবেন।
কিছু কোল্ড ওয়ালেট-
পেপার ওয়ালেট
হার্ডওয়ার ওয়ালেট- ট্ৰেজর, কিপকি, লেজার ন্যানো এস ইত্যাদি।
২. হট ওয়ালেটহট ওয়ালেট বলতে ওয়েব ওয়ালেট, ডেস্কটপ ওয়ালেট, মোবাইল ওয়ালেট এইগুলোকে বোঝায়। এক কথায় যে ওয়ালেট অনলাইন কানেক্টেড সেটাই হট ওয়ালেট। আমি আগেই ওয়েব ওয়ালেট সম্পর্কে কথা বলেছি। এখন আমরা ডেস্কটপ ওয়ালেট কিংবা মোবাইল ওয়ালেট নিয়ে।
ডেস্কটপ ওয়ালেট অনেকগুলো রয়েছে। তাদের মধ্যে আমি সেরা দুইটি ওয়ালেট নিয়ে কথা বলবো।
বিটকয়েন কোর হলো বিটকয়েন এর মূল ওয়ালেট। আপনি এই এপ্সটা আপনার ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপ এ ইন্সটল দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এইখানে কিছু কথা থেকে যায়। আমরা আগের আর্টিকেলে জেনেছি বিটকয়েন এর প্রতিটা ট্রানজেকশন ব্লকচেইনে রেকর্ড করা থাকে। বিটকয়েন এর প্রতিটা ডেস্কটপ ওয়ালেট (মূল ওয়ালেট- বিটকয়েন কোর, বিটকোর কিংবা আরো অনেকগুলো। তবে এই দুইটি জনপ্রিয় ) বিটকয়েনের সব ট্রানজেকশন ওয়ালেটে আপডেট দে। যেমন আপনি একটা ওয়ালেট ব্যবহার করতেছেন, আপনি অফলাইনে যখন ছিলেন তখন ৫টা রেকর্ড হয়েছে মানে ট্রানজেকশন হয়েছে। আপনি যখন ওয়ালেট ওপেন করবেন তখন আপনার ওয়ালেটে ওই ৫টা ট্রানজেকশন অটোমেটিক আপডেট হয়ে যাবে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় সিনক্রোনাইজেশন। অর্থাৎ বিটকয়েন এর প্রতিটা ট্রানজেকশন রেকর্ড সব কোর ওয়ালেটে থাকবে। এখন আপনি যদি বিটকয়েন কোর, বিটকোর ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনাকে ২০০৯ সাল থেকে সব ট্রানজেকশন আপডেট করতে হবে যার জন্য প্রায় ৫০০+ গিগাবাইট স্পেস লাগবে। সাথে ভালো নেট স্পিড থাকা লাগবে। যদিও আপনি চাইলে ৫০০ গিগাবাইট থেকে কম দিয়েও এই ওয়ালেট চালাতে পারবেন। যেমন ১০০ গিগাবাইট দিয়েও হয়। সেটা নিয়ে আমি অন্য একদিন লিখবো। আপাতত সেদিকে যেতে চাইতেছি না।
এখন আপনি যদি চিন্তা করেন ২০০৯ সাল থেকে বিটকয়েন এর প্রতিটা ট্রানজেকশন রেকর্ড ডাউনলোড কিংবা আপডেট করবেন তাহলে সেটা সময় সাপেক্ষ হবে এবং আপনার অনেক খালি স্পেস লাগবে। তার জন্য সমাধান হলো কোনো ট্রাস্টেড থার্ড পার্টির আপডেট এর উপর নির্ভর করা। অর্থাৎ আপনার কাজটা অন্য কেউ করে দেবে। সেক্ষত্রে আমরা ইলেকট্রাম ওয়ালেট ব্যবহার করতে পারি। এইটা অনেক ট্রাস্টেড এবং অনেকেই ব্যবহার করে থাকে। এইখানে আপনার কাজ শুধু এপ্সটা ইন্সটল করা। ব্যস। আর কিছু না। এতে আপনার বেশি স্পেস ও থাকা লাগবে না আবার নেট স্পিড ও ভালো থাকা লাগবে না।
মোবাইল ওয়ালেটইলেকট্রাম এর মোবাইল ওয়ালেট চাইলে ব্যবহার করতে পারেন কিংবা বিটপে/copay এর মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহার করতে পারেন।
কিছু সতর্কবানী-১. যে কোনো ওয়ালেট অবশ্যই অফিসিয়াল লিংক থেকে ডাউনলোড করবেন।
২. সবসময় আপনার প্রাইভেট কি সংরক্ষণ করবেন।
৩. ওয়ালেট ব্যাক আপ রাখবেন যদিও প্রাইভেট কি থাকলেই যথেষ্ট।
৪. আপনার প্রাইভেট কি কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
Originally posted at-
http://www.bitcoinbangladesh.info/showthread.php?tid=8