লেখক: GazetaBitcoinমেইন টপিক: Help Bitcoin help Ukraine!
ঠিক এক বছর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করে। এই দিনটি সমস্ত ইউক্রেনবাসী এবং গোটা মানবজাতির জন্য দুঃখময় দিন।
1miau এর সাজেশন করা বিটকয়েন ম্যাগাজিনের একটি
আর্টিকেল সম্প্রতি আমার বেশ নজর কেড়েছে। এই ম্যাগাজিনটিতে মূলত বিটকয়েন সম্পর্কে দুর্দান্ত সব আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকে। তবে এরই সাথে দার্শনিক বা স্বাধীনতাবাদী বিভিন্ন আর্টিকেলগুলোও এখানে প্রকাশ করা হয়।
এই আর্টিকেলটি বেশ বড়, সম্ভবতো আমার পড়া সবথেকে বড় একটি আর্টিকেল, যেটিতে প্রায় ১৪ হাজারের মতো শব্দসংখ্যা রয়েছে। যদিওবা এটি পড়তে আমার অনেক সময়ই লেগেছিল তবুও সর্বশেষে এটি আমাকে ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থনে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এখানে ইউক্রেনের অতীত সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাদের অতীতের সকল সংগ্রাম যা এখনো বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। এই সংগ্রামের কারণ একেক সময় একেক হলেও ক্ষতির পরিমাণ কিন্তু কখনো কমেনি বরং আগের মতোই রয়েছে।
আর্টিকেলটি মূলত ইউক্রেনে বিটকয়েনের গ্রহণযোগ্যতা এবং যুদ্ধকালীন যুদ্ধনায়ক বা ইউক্রেনীয় বিটকয়েনারদের গল্প তুলে ধরেছে। এখানে একটি গল্প আমার কাছে বেশ হৃদয়স্পর্শী মনে হয়েছে, যেখানে আমরা Naumenko নামক এক যুদ্ধনায়কের সাথে পরিচিত হয়েছি:
নাওমেনকো ২০১৮ সাথে Greg Maxwell এবং Pieter Wuille এর মতো বিশাল বিটকয়েন জায়েন্টদের সাথে Blockstream নামক একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টানি হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। পরবর্তীতে তিনি Maxwell এবং Wuille কে সাথে নিয়ে বিটকয়েনের উন্নয়নের জন্য সহ-লেখক হিসেবে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। বিটকয়েনের এই নতুন আপগ্রেডটির নাম ছিল Erlay। তাদের প্রস্তাবিত নতুন এই আপগ্রেডটির মাধ্যমে বিটকয়েন নেটওয়ার্ককে আরও দক্ষ এবং স্থিতিস্থাপক করে তোলা সম্ভব বলে জানা যায়।
আক্রমণের মাত্র কয়েকদিন আগেই, নাওমেনকো বিটকয়েনের এই নতুন বাস্তবায়নটি “CoinPool,” এ প্রকাশ করেন। এটি একাধিক ইউজারদের একই “UTXO,” বা ব্যয়যোগ্য বিটকয়েনের অংশবিশেষকে ব্যবহারের সক্ষমতা প্রদান করবে বলে জানা যায়। এরই সাথে Lightning Network এর ব্যবহার, এটিকে আরো স্কেলযোগ্য এবং অধিক গোপনীয়তা যুক্ত করার সুযোগ করে দেয়। CoinPool ছিল ডেভেলপার Antoine Riard এর বছরের পর বছরের কর্মের ফল।
২৪ ফেব্রুয়ারি নাওমেনকো যুদ্ধের কথা শুনে রিতিমতো কেঁপে ওঠেন। তার বন্ধরা তাকে বারবার টেক্সট দিয়ে বলে দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। এরই মাত্র ১২ ঘন্টা আগেও তিনি তার বৈদ্যুতিক যানে চড়ে একটি কফি শপি বই পড়েছিলেন। তখন আবহাওয়া ছিল ধূসর, সবকিছু কেমনযেন হতাশার রূপ ধারণ করেছিল, রাস্তাঘাটও ছিল প্রায় ফাঁকা। ভোর ৫ টার দিকে তিনি ঝাঁকুনি দিয়ে জেগে উঠলেন। যুদ্ধের শুরু বুঝতে পেরে তিনি তড়িঘড়ি করে তার ব্যাগপত্র গুছিয়ে মেট্রোরেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। সেখান থেকে তিনি সোভিয়েত যুগে নির্মিত পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধী একটি বাঙ্কারে আশ্রয় নিলেন।
মোট তিন দিন দুই রাত তাকে সেই বাঙ্কারটিতে থাকতে হয়েছিল। মেট্রোরেলে যাওয়ার সময় এক বৃদ্ধ মহিলা তাতে মাস্ক পড়তে বলেন। নাওমেনকো অবাক হয়ে মহিলাটির উদ্দেশ্যে বলেন, COVID-19 অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে, এখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তার সাথে আরো বিপুল পরিমাণ লোক যুদ্ধ থেকে বাঁচতে এই আশ্রয়স্থলটিতে অবস্থান নেয়। সবাইই থাকা খাওয়ার জন্য বালিশ-কম্বল ও খাবারের মজুদ নিয়ে আসে। যুদ্ধের প্রাথমিক অবস্থায় সবাইকে ভূগর্ভস্থে অবস্থান নিতে হলেও বেশ কিছুদিন পর প্রয়োজনের তাগিদে সবাইকেই বের হয়ে আসতে হয়।
যখন নাওমেনকোর আশ্রয়কেন্দ্রটি ছাড়ার সময় হয় তখন সে তার বন্ধুদের সাথে দেখা করে। তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় তারা শহর ছেড়ে চলে যাবে। এসময় তারা শহর ছাড়ার উদ্দেশ্যে গোলাপী রঙের একটি BMW করে পশ্চিমের দিকে রওনা দেয়। তখন রুশ আর্মি Kyiv এর আশেপাশের শহরগুলোতে অবস্থান নেয় এবং বেসমারিক নাগরিকদের হত্যা করা শুরু করে। বাহির থেকে তারা স্পষ্ট গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে সময় মূখ্য ভূমিকা পালন করেছিল।
বর্ডার অতিক্রম করে রোমানিয়ায় যাবার ঠিক পূর্বে নাওমেনকো তার বন্ধুদের অনুরোধ করেন তাকে যেন ইউক্রেনের একটি শহরে নামিয়ে দেয়া হয়। তিনি ইউক্রেনে থেকে যুদ্ধে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন।
পুতিনের আর্মি ইউক্রেনের জন্য বেশ কষ্ট ও দূর্দাশা বয়ে অনে। রুশ আর্মি শহরের পর শহর বোমা হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি উড়িয়ে দেয়। কিছু কিছু শহর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। Mariupol নামক একটি শহর যার জনসংখ্যা একসময় ৫ লক্ষের বেশি ছিল, সেটি এখন সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্যাটেলাইট থেকে ধারণকৃত ছবি থেকে দেখা যায় রুশ আর্মি Mariupol এ গণকবর খনন করেছে, যা সম্ভবতো হত্যাকৃত ইউক্রেনীয় নাগরিকদের মাটিচাপা দিতে ব্যবহার করা হবে। এটি একটি যুদ্ধোপরাধ।
পুতিনের এই যুদ্ধে সবাই আক্রান্ত হয়। এমনকি যারা ইউক্রেনের পশ্চিম অংশে অবস্থায় করে তাদেরকেও আশ্রয়স্থলে যেতে হয়েছিল। কারণ রাশিয়া প্রতিদিনই এসব অংশে রকেট হামলা চালিয়ে আসছিল। এটি আসলেই একটি ভয়াভয় পরিস্থিতি। কারণ যেকোনো সময় আপনি এবং আপনার বাড়িঘর রকেট হামলার শিকার হতে পারেন।
পুতিন ইউক্রেনসহ তার নিজের দেশে জন্য দুঃখ বয়ে আনেন। ফলে তার নিজের দেশও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষরিত শিকার হয়। তিনি ৩ লক্ষের বেশি যুবকদের একদম কোনো প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি ছাড়াই যুদ্ধক্ষেত্রের ফ্রন্ট লাইনে পাঠিয়ে দেন। যুদ্ধের ভাষায় এই যুদ্ধকৌশলকে বলে "
cannon fodder"।
অনেক রাশিয়ানই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সীমান্তে থাকা রুশ রক্ষীদের হাতে তারা ধরা পড়ে যায়। এসময় তাদের কারারুদ্ধ করে আবার যুদ্ধক্ষেত্রের ফ্রন্ট লাইনে পাঠানো হয়।
এটি আসলেই লজ্জাজনক যে পুতিন এসব করছেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনিই সবচেয়ে বড় যুদ্ধ শুরু করছেন। এজন্য পুটিনকে হিটলারের সাথে মিল রেখে " Putler" বলা একদম ন্যায়সঙ্গত। পুতিন এই যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন করে Soviet Union 2.0 তৈরি করে তার কমিউনিস্টকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান।
বিটকয়েন কিভাবে আমাদের পুতিনেন শাসন থেকে মু্ক্তি দিবে? Alex Gladstein তার
Currency of last resort আর্টিকেলটিতে, বিটকয়েন কিভাবে পুতিনের এই রক্তাক্ত যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে তার বর্ননা দিয়েছেন। বিটকয়েন পুতিনের একনায়কত্ব থেকে পরিত্রাণ পেতে বা অন্ততপক্ষে তাকে দুর্বল করতে সাহায্য করতে পারে।
অবশ্যই, এটি সহজ হবে না এবং বিটকয়েন একা পুতিনকে ইউক্রেন আক্রমণ করা থেকে আটকাতে পারবে না কিন্তু বিটকয়েন পুতিনের এই শাসনের আক্ষরিক অর্থে বন্ধের সমাধানের একটি অংশ হতে পারে।
বিটকয়েন কিভাবে অবদান রাখবে:- রাশিয়ানরা বিটকয়েন ব্যবহারের মাধ্যমে পুতিনের যুদ্ধের বিপক্ষে সমর্থন জানাতে পারবে, কারণ আমরা সবাই জানি পুতিন সবচেয়ে বেশি তার ক্ষমতা হারাতে ভয় পায়। তিনি একজন স্বৈরশাসক এবং তাকে গণতান্ত্রিকভাবে অপসারণ করা সম্ভব নয়, তাই জনগণকে গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি পুনরুদ্ধার করতে বিটকয়েনের ব্যবহার শুরু করতে হবে। বিটকয়েন অনেক শক্তিশালী একটি গণতান্ত্রিক হাতিয়ার, আর এটি যদি রাশিয়ানরা রুবেল এর পরিবর্তে ব্যবহার করে তাহলে পুতিনন সরকার কোনোভাবেই এটিকে নিষিদ্ধ করতে পারবেনা।
- ইউক্রেনের মিত্র হিসেবে, রাশিয়ার জাতীয় মুদ্রা, রাশিয়ান রুবেলকে দুর্বল করতে আমাদের কাজ করা উচিত। এতে করে পুতিনের পক্ষে নতুন করে অস্ত্র কেনা বা তৈরি করা সম্ভব হবে না। ফলস্বরূপ রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনে কম লোক নিহত হবে এবং ইউক্রেন রাশিয়ান সৈন্যদের ইউক্রেনের বাহিরে ঠেলে দিতে পারবে।
- পুতিন যদি জোড় করেই এভাবে শাসন করতে থাকে, তাহলে রাশিয়ানদের কর দিতে অস্বীকার জানানো উচিত কারণ এসব দেশে কোনো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়। এটি করার মাধ্যমে, জনগণ একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে পুতিন সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে পারবে। পূর্ব জার্মানিও ঠিক একইভাবেই ক্ষমতা হারায়।
- ইউক্রেনকে সাহায্য পাঠাতে বিটকয়েন যে সাহায্য করতে পারে তা icopress or JohnnyUA এর উদ্যোগ থেকে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে।
কিছুদিন আগে আমি একটি টপিক লিখেছিলাম যেখানে
বিটকয়েন কিভাবে করোনা ভাইরাসের বিস্তার কমাতে সাহায্য করতে পারে তা বলা হয়েছিল। কাগজী মুদ্রার পরিবর্তে বিটকয়েনের ব্যবহার সংক্রমণের হার অনেকাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম।
এখানে বিটকয়েনের আরো একটি সুবিধা রয়েছে: সেটি হলো ইউক্রেনে থাকা মানুষদের সাহায্য করা, তাদেরকে কাগজী মুদ্রা গ্রহণ থেকে থামাতে পারলেও, বিটকয়েনকে কেউ থামাতে পারবে না। G7 ভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও সেটি রাশিয়ান মুদ্রা রুবেলকে দুর্বল করতে যথেষ্ট ছিল না। রুবেলকে দুর্বল করতে বিটকয়েন বেশ ভূমিকা রাখতে পারবে।
এটি হয়তো যথেষ্ট হবেনা কিন্তু এতে সামান্য কিছু হলেও হবে! এবং এটি আমরা যতো বেশি ব্যবহার করতে থাকবে ততোবেশি শক্তিশালী হতে থাকবে, এবং একসময় সাহায্যরূপে আমাদের কাছে ফিরে আসবে। এতে হয়তো খুব বেশি কিছু হবে না, অন্তত আমরা সবাই বিটকয়েনের মাধ্যমে ইউক্রেনকে এভাবেই সাহায্য করতে পারি।
এজন্য আমরা সবাই বিটকয়েনকে সাহায্য করি ইউক্রেনকে সাহায্য করি!